মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিল স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দেশটির ইতিহাসে দীর্ঘতম ৪৩ দিনের গভর্নমেন্ট শাটডাউন। এই অচলাবস্থায় হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী বেতন ছাড়া ছিলেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ফেডারেল কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিল।
বুধবার সন্ধ্যায় প্রতিনিধি পরিষদে ২২২–২০৯ ভোটে পাস হওয়া বিলটি খাদ্য সহায়তা, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে অর্থায়ন পুনরায় চালু করবে। বিলটি এর আগে সিনেটে পাস হয় এবং এটি ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের অর্থায়ন বাড়াবে।
এই চুক্তি সাময়িক স্বস্তি দিলেও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই অচলাবস্থার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এখনো অনিশ্চিত, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণ ইতিমধ্যে ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে এবং বছরে আরও প্রায় ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ হচ্ছে।
শাটডাউন শেষ হওয়ায় বিমান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার আশা করা হচ্ছে, পাশাপাশি কোটি পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তাও পুনরায় শুরু হবে। এতে সরকারি সংস্থাগুলোও আবার কর্মসংস্থান, মূল্যস্ফীতি ও ভোক্তা ব্যয়সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ করতে পারবে, যা এতদিন স্থগিত ছিল। তবে কিছু তথ্য হয়তো আর কখনোই প্রকাশ পাবে না।
অর্থনীতিবিদদের হিসাব অনুযায়ী, এই শাটডাউন চলাকালীন প্রতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) থেকে প্রায় এক-দশমাংশ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যদিও আগামী কয়েক মাসে এই ক্ষতি পূরণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভোটটি এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হয়, যখন ডেমোক্র্যাটরা কয়েকটি বড় নির্বাচনে জয় পেয়ে স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি বাড়ানোর বিষয়ে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত মনে করছিল। যদিও নতুন চুক্তিটি ডিসেম্বরে সিনেটে এই বিষয়ে ভোটের সুযোগ রাখছে, প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন এ বিষয়ে কোনো অঙ্গীকার করেননি।
নিউ জার্সির প্রতিনিধি এবং নবনির্বাচিত গভর্নর মিকি শেরিল তার শেষ সংসদীয় ভাষণে বিলটির বিরোধিতা করেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির সমালোচনা করে সহকর্মীদের সতর্ক করেন।
তবে এই দীর্ঘ অচলাবস্থা শেষে কোনো দলই স্পষ্ট রাজনৈতিক জয় পায়নি। বুধবার প্রকাশিত এক রইটার্স/ইপসোস জরিপে দেখা যায়, ৫০ শতাংশ আমেরিকান এই শাটডাউনের জন্য রিপাবলিকানদের দায়ী করেন, আর ৪৭ শতাংশ ডেমোক্র্যাটদের।
সরকার পুনরায় চালুর পাশাপাশি নতুন এই অর্থায়ন বিলটিতে এমন একটি ধারা যুক্ত হয়েছে, যা অনুযায়ী আটজন রিপাবলিকান সিনেটর জানুয়ারি ৬, ২০২১ সালের ক্যাপিটল হামলার তদন্তে তাদের ফোন রেকর্ড সংগ্রহের অভিযোগে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন। বিলটি ভবিষ্যতে এ ধরনের তথ্য সংগ্রহে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত সিনেটরদের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ ডলার পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ ও আইনজীবী ফি পাওয়ার সুযোগ দেয়।
