দেশের বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যে কিছুটা আশা দেখাচ্ছে ভারতীয় আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ। বাংলাদেশে রফতানির জন্য ভারতের ঝাড়খণ্ডে ১৪৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে বাংলাদেশের গ্রিড লাইন যুক্ত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রস্তুত করতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার কাজ শিগগিরই শুরু হবে। এটি শেষ হলে আগামী মাসের শেষ দিকে আদানির বিদ্যুৎ দেশে আসতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এমন একসময় উৎপাদনে আসতে যাচ্ছে, যখন জ্বালানি সংকটের কারণে দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো প্রয়োজনমাফিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। সংকটের এ সময়ে আদানির প্রথম ইউনিটের সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দেশে আনা গেলে ঘাটতি কিছুটা হলেও কমে আসবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এরই মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে। এখন বাংলাদেশ অংশে সঞ্চালন লাইনের পরীক্ষা চালানো হবে। চলতি সপ্তাহেই পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এ পরীক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারে। শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে ৪০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ দেশে আনা হতে পারে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেয়ার মতো সঞ্চালন অবকাঠামো এখনো প্রস্তুত করা যায়নি। যে কারণে প্রথম ইউনিট প্রস্তুত হলেও তার পুরো সক্ষমতা এখনই ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, শুরুতে প্রথম ইউনিটের ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসার কথা থাকলেও সাবস্টেশন নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় প্রাথমিকভাবে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেয়া হতে পারে। বিদ্যমান সাবস্টেশনে নিয়ে এ বিদ্যুৎ দেশের উত্তরাঞ্চলে সরবরাহ করা হবে। এতে আপাতত উত্তরাঞ্চলে দীর্ঘদিনের বিদ্যুৎ সংকট নিরসন হবে।
আদানির বিদ্যুৎ দেশে আনার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে এবং বগুড়ায় ৪০০ কেভি দুটি গ্রিড সাবস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে পিজিসিবি সূত্রে জানা গিয়েছে। এরই মধ্যে ভারত সীমান্তবর্তী মনাকষা থেকে রহনপুর পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ২২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে সংস্থাটি।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। আদানির প্রথম ইউনিটের ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করা গেলে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ হাজার ৯৬০ মেগাওয়াটে। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো সক্ষমতা (১৪৯৫ মেগাওয়াট) গ্রিডে সরবরাহ হলে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াটে, যা দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ১০ শতাংশ।
বিপিডিবির সঙ্গে আদানির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৭ সালে। ২৫ বছর মেয়াদি এ বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারিত হয় ৬ টাকা ৮০ পয়সা (৮ দশমিক ৬১ সেন্ট)। তবে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এখন আর এ মূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়ের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।