
ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়, বিশ্বজুড়ে ব্যাপক অর্থনৈতিক ঝড় তুলবে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিবহন করা হয়, যা বিশ্বব্যাপী সমুদ্রযান দ্বারা বহন করা তেলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ইরানের হুমকিতে তেলের দাম ইতিমধ্যেই ৭–১৫% বেড়েছে। কিছু বিশ্লেষক ভবিষ্যতে ১০০-১৫০ ডলার পর্যন্ত মূল্য বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করছেন । যার ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে উদীয়মান দেশগুলোর সংগঠিত উত্থান থেমে যেতে পারে।
তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব সরাসরি ভোক্তা মূল্যে ছড়িয়ে পড়ে—পরিবহন, পণ্য উৎপাদন, কৃষি খাত সব খাতে প্রবাহিত হয়। বিশ্বব্যাংক ২০২৫ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি মাত্র ২.৩% হিসেবে ধরে রেখেছে । অস্থিরতা সাধারণভাবে “জিওপলিটিক্যাল রিস্ক প্রিমিয়াম” বাড়ায়, যা বিনিয়োগকারীদের নিরাপদে আশ্রয় দেয়, যেমন স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধি, তেল কোম্পানির শেয়ার বৃদ্ধি । একইসাথে মূল স্টক মার্কেট, ইউরোপ ও এশিয়ার সূচকগুলো কমে যেতে পারে।
হরমুজ প্রণালী দিয়ে চলাচলকারি জাহাজগুলো বিকল্প পথে চললে বীমা খরচ প্রায় ২০% বৃদ্ধি পেতে পারে, যার আঘাত পড়ে সামগ্রীর পরিবহন খরচে । ফলে ব্যবহারকারী মূল্য বেশি দিতে হয়, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতিমধ্যেই পাইপলাইনের মাধ্যমে হরমুজ প্রনালি ব্যবহার ছাড়াই বাইরে রপ্তানি করছে । কিন্তু ইরাক ও কুয়েতের মতো দেশদের বিকল্প নেই; তাদের রপ্তানি স্তব্ধ হবে, তাতে বৈশ্বিক চাহিদার চাপ বাড়বে। ইউরোপ ও এশিয়ায় কাঁচামাল, ইলেকট্রনিক্স ও অন্যান্য পণ্যের সাময়িক ঘাটতিও সৃষ্টি হতে পারে ।
প্রাণঘাতী ঝুঁকি ও সামরিক উত্তেজনা বেড়ে যেতে পারে—বিশেষত মার্কিন ও ইউরোপীয় নৌবাহিনীর হস্তক্ষেপ বাড়লে । হরমুজ প্রণালীর সম্ভাব্য বন্ধ পৃথিবীর অর্থনৈতিক সিস্টেমে একটি “শক ও ওয়েভ” সৃষ্টি করবে।
মূলত হরমুজ প্রণালী হচ্ছে ইরান ও ওমানের মাঝখানে অবস্থিত একটি সংকীর্ণ জলপথ, যার মাধ্যমে উপসাগরীয় দেশগুলোর অধিকাংশ তেল রপ্তানি হয়। এর আগে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের তেল রপ্তানির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর ইরান এই প্রণালী বন্ধের হুমকি দিয়েছিল।