 
						
									ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ ‘লাইকি’ ও ‘বিগো লাইভ’র মাধ্যমে অবৈধভাবে দেশ থেকে প্রতি মাসে শত কোটি টাকা পাচার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিআইডি সাইবার পুলিশের ডিআইজি জামিল আহমেদ।
রোববার দুপুরে মালিবাগ সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে তিনি জানান, এক অভিযোগের ভিত্তিতে এক বিদেশি নাগরিকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার বিদেশি নাগরিক বিগো লাইভ ও লাইকির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বাংলাদেশি নাগরিক মোস্তফা সাইফ রেজা বিগো লসিগের বাংলাদেশি এডমিন। মো. আরিফ হোসেন বাংলাদেশে বিভিন্ন মেয়েদের মাসিক বেতনে চাকরি দিয়ে বিগো লাইভের সঙ্গে যুক্ত করতেন। এস এম নাজমুল হক ভার্চুয়াল মুদ্রা-ডায়মন্ড বিক্রির অন্যতম প্রধান বাংলাদেশি এজেন্ট এবং আসমা উল হুসনা সেজুতী বিগো লাইভের প্রধান এডমিন। এডমিনরা মাসিক এক লাখ টাকা করে বেতন পেতেন।
তিনি জানান, লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপ বিগো লাইভ ও লাইকি ডিজিটাল কয়েনসদৃশ (ডায়মন্ড) বিক্রির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করছে এমন একটি অভিযোগ সিআইডির সাইবার পুলিশের নজরে আসে। এ ছাড়াও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধের তথ্য প্রকাশ হয়। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিআইডির সাইবার পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগো লাইভ ও লাইকিতে সাধারণত দেশের উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভিডিও স্ট্রিমিং করেন। বিগো লাইভে অ্যাপে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। একটি ব্রডকাস্টার আইডি ও অন্যটি সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডি। ব্রডকাস্টার আইডি ব্যবহার করে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা ভিডিও লাইভ স্ট্রিম করেন। এই ভিডিও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে কথিত বিনোদনের আড়ালে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয়া হতো।
এ ছাড়াও সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডির মাধ্যমে যারা ভিডিও স্ট্রিমিং করতো, বিনিময়ে তাদের ডিজিটাল কয়েনসদৃশ ডায়মন্ড গিফট করা হতো। পরে এ ডায়মন্ড টাকায় রূপান্তরের মাধ্যম অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতো। তাদের টার্গেট মূলত দেশের যুব সমাজ এবং বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার প্রলোভনে অ্যাপে প্রবেশ করেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা। তার জন্য ডায়মন্ড নামে একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনতে হয় ব্যবহারকারীদের। সাধারণত বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে এই ডায়মন্ড কেনা যায়। সেই মুদ্রা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হতে পারেন ব্যবহারকারীরা। যে যত বেশি ডায়মন্ড উপহার পেতেন লাইভে তিনি ততবেশি অশ্লীলতা করতেন।
সাইবার পুলিশের ডিআইজি আরো বলেন, ডায়মন্ড সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য রয়েছে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন এজেন্সি। এরকম একাধিক এজেন্ট বাংলাদেশে রয়েছে। এসব এজেন্সির প্রত্যেকের একাধিক পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে। সাধারণত ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব এজেন্সির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। সাধারণ ব্যবহারকারীরা এজেন্সির পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ প্রদান করে ডায়মন্ড ক্রয় করেন।
বাংলাদেশি লক্ষাধিক এসব অ্যাপ ব্যবহারকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, ভার্চুয়াল মুদ্রা ও ব্যাংকের মাধ্যমে ডায়মন্ড কিনছেন। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো অনেকের নাম এসেছে এবং তাদের বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে প্রায় শত কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
এসব অ্যাপস বন্ধের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ সিআইডি নেবে কি-না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাইকি ও বিগো লাইভ অ্যাপস বিদেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমরা নিয়ন্ত্রণকারীদের এসব বিষয়ে নজরে আনব। এছাড়াও আমরা এসব অ্যাপস সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি। যারা অশ্লীল ভিডিও দিচ্ছেন, তাদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

 
	                                     
	                                     
	                                     
	                                     
	                                     
	                                     
	                                    