ঢাকা     ২৯ জুন ২০২৫ ||  ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

Biz Tech 24 :: বিজ টেক ২৪

আকাশের রাজা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০ যুদ্ধবিমান

বিজটেক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:১০, ২৯ জুন ২০২৫

আপডেট: ১৫:১৫, ২৯ জুন ২০২৫

আকাশের রাজা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০ যুদ্ধবিমান

আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে একেকটি যুদ্ধবিমান শুধু আকাশে শত্রু মোকাবিলার অস্ত্র নয়, বরং তা একটি দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও প্রযুক্তির প্রতীক। স্টেলথ প্রযুক্তি, সুপারক্রুজ গতি, উন্নত সেন্সর, ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা ও ভারী অস্ত্রবহনের ক্ষমতা মিলিয়ে প্রতিটি আধুনিক যুদ্ধবিমান যেন একটি উড়ন্ত ঘাঁটি। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থার তথ্যে উঠে এসেছে বিশ্বের ১০টি সর্বাধুনিক, শক্তিশালী ও ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমান, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, সুইডেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথভাবে তৈরি করা বিমান। নিচে প্রতিটি বিমানের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য, দাম ও উৎপাদনকারী দেশের তথ্য তুলে ধরা হলো। 

F-35 (যুক্তরাষ্ট্র)
বিশ্বের সবচেয়ে প্রযুক্তিসম্পন্ন যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি F-35। এটি স্টেলথ সুবিধাসহ মাল্টিরোল ফাইটার জেট, যা শত্রুর রাডারে ধরা পড়ে না। এই বিমানের তিনটি সংস্করণ রয়েছে—F-35A (বায়ুসেনা), F-35B (শর্ট টেকঅফ ও ভার্টিকাল ল্যান্ডিং), এবং F-35C (নৌবাহিনীর জন্য)। এটি একইসঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারি, স্থল ও আকাশ আক্রমণ এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধ পরিচালনায় সক্ষম। 
দাম: প্রায় ৮৫–১১০ মিলিয়ন ডলার

F-22 Raptor (যুক্তরাষ্ট্র)
এখন পর্যন্ত নির্মিত দ্রুততম ও সর্বোচ্চ স্টেলথ ক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধবিমান এটি। শুধুমাত্র মার্কিন বিমান বাহিনী এটি ব্যবহার করে এবং রপ্তানি নিষিদ্ধ। এটি ‘সুপারক্রুজ’ গতি ধরে রাখতে পারে দীর্ঘ সময়, যার মানে অতিস্ব sonic গতি বজায় রাখতে সক্ষম বাড়তি জ্বালানি ছাড়াই।
দাম: প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার

Sukhoi Su-57 (রাশিয়া)
রাশিয়ার প্রথম পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ ফাইটার Su-57। এটি একইসাথে এয়ার-টু-এয়ার ও এয়ার-টু-গ্রাউন্ড মিশনে পারদর্শী। এই বিমানে রয়েছে উন্নত রাডার, ৩৬০ ডিগ্রি সেন্সর কাভারেজ এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এভিওনিক্স সিস্টেম।
দাম: আনুমানিক ৫০–৭০ মিলিয়ন ডলার

Chengdu J-20 Mighty Dragon (চীন)
চীনের তৈরি এই পঞ্চম প্রজন্মের বিমানটি আমেরিকান F-22 এবং F-35 এর পাল্টা জবাব হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এটি লং-রেঞ্জ স্ট্রাইক, স্টেলথ অপারেশন ও ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারে সক্ষম। জে-২০-এর সর্বশেষ সংস্করণে রয়েছে দেশীয় WS-15 ইঞ্জিন।
দাম: প্রায় ১১০–১২০ মিলিয়ন ডলার

Rafale (ফ্রান্স)
ফ্রান্সের এই চতুর্থ প্রজন্মের মাল্টিরোল বিমানটি এখন বিশ্বের অন্যতম নির্ভরযোগ্য যুদ্ধবিমান। এটি একই সঙ্গে বায়ুযুদ্ধ, পারমাণবিক হামলা, গোয়েন্দা মিশন ও সমুদ্রপৃষ্ঠে আক্রমণে সক্ষম। ভারতসহ একাধিক দেশ এই যুদ্ধবিমান নিজেদের সংগ্রহে রেখেছে। 
দাম: আনুমানিক ১০০–১২০ মিলিয়ন ডলার

Eurofighter Typhoon (ইউরোপীয় ইউনিয়ন: যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, স্পেন)
যৌথ উদ্যোগে তৈরি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমানটি বর্তমানে ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি প্রধান স্তম্ভ। এটি ডগফাইট, সারফেস স্ট্রাইক এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সব ধরনের অপারেশনে সক্ষম।
দাম: ৯০–১২০ মিলিয়ন ডলার

F/A-18 Super Hornet (যুক্তরাষ্ট্র)
বোয়িং নির্মিত এই বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর প্রধান যুদ্ধবিমান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি বহুমুখী রণনীতি সম্পন্ন, যুদ্ধে বিশ্বস্ত ও তুলনামূলক কম ব্যয়ে কার্যকর একটি অপশন।
দাম: আনুমানিক ৭০ মিলিয়ন ডলার

MiG-35 (রাশিয়া)
MiG-29 এর আধুনিক সংস্করণ MiG-35 এ রয়েছে উন্নত এভিওনিক্স, নতুন রাডার ও ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম। এটি স্বল্প ব্যয়ের মধ্যে আধুনিক যুদ্ধবিমান প্রযুক্তির ভালো সংমিশ্রণ।
দাম: প্রায় ৪০–৫০ মিলিয়ন ডলার

JF-17 Thunder Block III (পাকিস্তান-চীন যৌথ উদ্যোগ)
পাকিস্তান ও চীনের যৌথ প্রকল্প JF-17 Thunder, বিশেষ করে Block III সংস্করণে আধুনিক AESA রাডার, হেলমেট-মাউন্টেড টার্গেটিং সিস্টেম ও স্টিলথ ডিজাইন অন্তর্ভুক্ত।
দাম: ২৫–৩৫ মিলিয়ন ডলার

Saab JAS 39 Gripen (সুইডেন)
গ্রিপেন একটি হালকা ও দ্রুতগামী মাল্টিরোল ফাইটার যা অল্প খরচে উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহ করে। এটি স্বল্প পরিসরের বিমানঘাঁটি থেকেও পরিচালিত হতে পারে এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অত্যন্ত কম।
দাম: আনুমানিক ৫০–৬০ মিলিয়ন ডলার

প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও কৌশলগত প্রয়োজন অনুসারে এসব বিমান তৈরি ও ব্যবহার হয়। প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে এই যুদ্ধবিমানগুলো আরও স্মার্ট ও প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে—যা আগামী দিনের যুদ্ধের দৃশ্যপট পাল্টে দিতে পারে। সূত্র: গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার, জেনস ডিফেন্স উইকলি, ডিফেন্স অ্যারোনটিক্স। 

premierbankltd