বিশ্বের সবচেয়ে গোপনীয়, ব্যয়বহুল এবং প্রযুক্তিনির্ভর যুদ্ধবিমানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত বি-২ স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীতে এটি যুক্ত হলেও আজও বিশ্বের অন্য কোনো দেশ এমন প্রযুক্তিসম্পন্ন যুদ্ধবিমান তৈরি করতে পারেনি। চলুন জেনে নিই, কেন এতো ভয়ংকর করে তুলেছে এই যুদ্ধবিমানকে।
স্টেলথ প্রযুক্তি: রাডারে অদৃশ্য
বি-২ বোমারু যুদ্ধবিমানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর স্টেলথ প্রযুক্তি, যার ফলে এটি শত্রুপক্ষের রাডারে ধরা পড়ে না। বিমানের আকৃতি, শরীরে ব্যবহৃত রেডিও তরঙ্গ-শোষক পদার্থ এবং বিশেষ পেইন্ট—সব মিলিয়ে এটি রাডার এড়িয়ে গোপনে শত্রুপক্ষের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। এর ফলে পারমাণবিক বা প্রচলিত অস্ত্র বহন করেও শত্রুর সুরক্ষিত অঞ্চলে হামলা চালানো সম্ভব হয়।
‘ফ্লাইং উইং’ ডিজাইন
ডিজাইন একে অন্য সব যুদ্ধবিমান থেকে আলাদা করে তোলে। এটি মূলত একটি উইং-শেইপ ফ্লাইং প্ল্যাটফর্ম, অর্থাৎ কোনো লেজ বা উল্লম্ব স্থায়ী কাঠামো নেই। এ ধরনের নকশা শুধু স্টেলথ সক্ষমতাই বাড়ায় না বরং এটি বিমানটিকে আকাশে আরও স্থিতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ রাখে।
দূরপাল্লার ক্ষমতা
বি-২ বোমারু যুদ্ধবিমান একটানা ১১,০০০ কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করতে পারে। আর ‘এয়ার-টু-এয়ার রিফুয়েলিং’ অর্থাৎ আকাশেই জ্বালানি নেওয়ার সুবিধার কারণে এটি কার্যত পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে হামলা চালাতে সক্ষম।
পারমাণবিক ও প্রচলিত অস্ত্র বহনের সক্ষমতা
এই বিমানটি একযোগে ২০ টন পর্যন্ত অস্ত্র বহন করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে GPS-নির্ভর স্মার্ট বোমা, পারমাণবিক ওয়ারহেড এবং প্রচলিত বোমা। এটি একমাত্র মার্কিন বিমান যেটি স্টেলথ মোডে পারমাণবিক হামলা চালাতে সক্ষম।
অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সীমিত সংখ্যা
একটি বি-২ বোমারু বিমানের খরচ প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখন পর্যন্ত মাত্র ২১টি বি-২ নির্মিত হয়েছে, যার মধ্যে ২০টি সক্রিয় এবং একটি দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়েছে।
সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও গোপনীয়তা
বি-২ এর ভেতরে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম জটিল এভিওনিক্স সিস্টেম, স্যাটেলাইট যোগাযোগ প্রযুক্তি ও অটো-পাইলট সিস্টেম। এই বিমানের প্রযুক্তির অনেক অংশ এখনো টপ সিক্রেট হিসেবে রয়ে গেছে, যাতে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো কোনোভাবেই অনুকরণ করতে না পারে।
বি-২ স্পিরিট শুধু একটি যুদ্ধবিমান নয় বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য ও প্রযুক্তির প্রতীক। স্টেলথ প্রযুক্তি, দূরপাল্লার সক্ষমতা এবং পারমাণবিক অস্ত্র বহনের ক্ষমতা এই বিমানটিকে বিশ্বে এক অনন্য মর্যাদা দিয়েছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো সময় বিশ্বের যেকোনো স্থানে অদৃশ্যভাবে আঘাত হানতে পারে, যা একে অন্যান্য যুদ্ধবিমান থেকে আলাদা ও ভয়ংকর করে তুলেছে।
