ঢাকা     ১০ অক্টোবর ২০২৫ ||  ২৫ আশ্বিন ১৪৩২

Biz Tech 24 :: বিজ টেক ২৪

পৃথিবীর মতো গ্রহের খোঁজে মহাবিশ্বে মানুষের মহাযাত্রা

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ৬ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১৩:১৬, ৮ অক্টোবর ২০২৫

পৃথিবীর মতো গ্রহের খোঁজে মহাবিশ্বে মানুষের মহাযাত্রা

১৯৯৫ সালের ৬ অক্টোবর—ইতালির ফ্লোরেন্সে এক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে দুই সুইস জ্যোতির্বিজ্ঞানী ঘোষণা দেন, তারা সূর্যের বাইরের এক নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করা একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। এই ঘোষণাই বদলে দেয় মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানবজাতির ধারণা।

জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিশেল মেয়র ও তার ছাত্র দিদিয়ের কেলোজ আবিষ্কার করেন নক্ষত্র ৫১ পেগাসি-এর চারপাশে ঘুরছে একটি অদ্ভুত গ্রহ—৫১ পেগাসি বি। এটি বৃহস্পতির প্রায় অর্ধেক ভরের একটি গ্যাস জায়ান্ট, যা তার নক্ষত্রকে মাত্র চার দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে। এত কাছাকাছি অবস্থানের কারণে এর তাপমাত্রা প্রায় ১,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেন আগুনের চুল্লি।

এই যুগান্তকারী আবিষ্কার সম্ভব হয়েছিল ফ্রান্সের হোট-প্রোভঁস মানমন্দিরে স্থাপিত এলোডি (Elodie) নামের স্পেকট্রোগ্রাফের মাধ্যমে। যন্ত্রটি নক্ষত্রের আলো বিশ্লেষণ করে এমন এক ছন্দময় দোলন শনাক্ত করে, যা অদৃশ্য কোনো বস্তুর মহাকর্ষীয় টানেই ঘটছে বলে ব্যাখ্যা করেন গবেষকেরা। বহু যাচাই-বাছাই শেষে তারা নিশ্চিত হন—এটি একটি গ্রহেরই প্রভাব। 

১৯৯৫ সালের অক্টোবরে তাদের গবেষণা প্রকাশিত হয় নেচার সাময়িকীতে—শিরোনাম ছিল ‘A planet in Pegasus?’। প্রথমে অনেকে সন্দেহ করলেও অল্প সময়ের মধ্যেই অন্যান্য গবেষক দলও বিষয়টি নিশ্চিত করে। এর মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন সম্পূর্ণ নতুন এক গ্রহশ্রেণি—‘হট জুপিটার’।

এই আবিষ্কার থেকেই শুরু হয় এক নতুন যুগ—এক্সোপ্ল্যানেট (আমাদের সৌরজগতের বাইরের গ্রহ) অনুসন্ধানের যুগ। গত তিন দশকে বিজ্ঞানীরা ৬,০০০টিরও বেশি এমন গ্রহ শনাক্ত করেছেন—কেউ দুই নক্ষত্রকে ঘিরে ঘোরে, কেউ আবার এত হালকা যে তাকে বলা হয় ‘সুপার-পাফ’।

২০১৯ সালে মেয়র ও কেলোজ এই আবিষ্কারের জন্য পান নোবেল পুরস্কার। বিজ্ঞানীরা এখন জানেন, অধিকাংশ নক্ষত্রেরই নিজস্ব গ্রহমণ্ডল রয়েছে। তবুও এখনো পাওয়া যায়নি পৃথিবীর মতো আকার, ভর ও তাপমাত্রার কোনো সত্যিকারের গ্রহ।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন মানমন্দিরে বিজ্ঞানীরা এই অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। কানারি দ্বীপপুঞ্জের লা পালমা অবজারভেটরিতে স্থাপিত হার্পস-এন (HARPS-N) স্পেকট্রোগ্রাফের মতো যন্ত্র দিয়ে তারা দূর নক্ষত্রের আলো বিশ্লেষণ করছেন। তাদের আশা, হয়তো কোনো একদিন পাওয়া যাবে সেই কাঙ্ক্ষিত গ্রহ—যা হতে পারে আমাদের দ্বিতীয় পৃথিবী।