
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশের মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়ে ১২.৫ শতাংশ থেকে কমে ৮.৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের টেকসই উত্তরণ কৌশল বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় তিনি এ তথ্য জানান। সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের বিস্তারিত ব্রিফ করেন।
গভর্নর বলেন, “আমরা এখনো ব্যাংকিং খাতের সার্বিক স্থিতিশীলতা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে পারিনি, তবে চলমান সংস্কার কার্যক্রমের ফলে ধীরে ধীরে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে।”
তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পাঁচ মাসের আমদানির সমপরিমাণে রয়েছে, যা একটি ইতিবাচক নির্দেশক।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে তিনি বলেন, “১২.৫ শতাংশ থেকে কমে বর্তমানে তা ৮.৩ শতাংশে এসেছে। গত এক-দুই মাসে এটি আরও কমে প্রায় ৭ শতাংশে নামতে পারতো, তবে চালের দামের সাময়িক বৃদ্ধির কারণে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে চালের দাম আবারও কমতে শুরু করেছে, ফলে আগামী মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি আরও হ্রাস পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।”
ব্যাংক খাতের দুরবস্থা ও খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে ড. মনসুর বলেন, “বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা মূলত পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির ফল।”
তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ ২৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪–৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
আর্থিক খাতের পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে গভর্নর বলেন, পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করা হবে এবং নয়টি নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন (লিজিং কোম্পানি) ধীরে ধীরে বন্ধ করা হবে।
উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা বিকাশে উৎসাহ দিতে তিনি জানান, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯০০ কোটি টাকার একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড গঠন করা হচ্ছে, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক অতিরিক্ত ৬০০ কোটি টাকা প্রদান করবে।
গভর্নর আরও বলেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে ও নগদ অর্থ ব্যবস্থাপনার খরচ কমাতে দেশে ক্যাশলেস ট্রানজ্যাকশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ব্যাংকিং খাতের চলমান সংস্কার ও আর্থিক শৃঙ্খলা জোরদার করার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরবে।