
নতুন করে চালু করা 'বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন' পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় ২০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত ও ৪ হাজার ৭৭১ জনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।
ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করায় প্রাথমিকভাবে ৪,৯৭১ জন কর্মীকে ওএসডি করা হয়েছিল। পরে তাদের মধ্য থেকে চাকরিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ২০০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
যেসব কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে, তারা বেতন-ভাতা পাবেন। তবে ব্যাংকে তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব বা কাজ থাকবে না। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) তত্ত্বাবধানে এই বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মীকে অংশগ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হলেও অংশ নেন মাত্র ৪১৪ জন। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা সত্ত্বেও বেশিরভাগ কর্মী পরীক্ষাটি বর্জন করেন।
ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এই সময় ব্যাংকটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই কর্মকর্তাদের অনেকেই চট্টগ্রামের, বিশেষ করে এস আলমের শক্তিশালী ব্যবসায়িক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল।
ব্যাংকের এক লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই সময়ে চট্টগ্রাম থেকে ৭ হাজার ২২৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫০০ জনের বেশি শুধু পটিয়া থেকেই নিয়োগ পান।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রায় ২ হাজার ৫০০ কর্মী বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেট জমা দিয়েছিলেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পরে এসব সার্টিফিকেট যাচাই করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে। এর বাইরেও বেশ কিছু কর্মকর্তার জাল সার্টিফিকেট পাওয়া যাওয়ায় ইতিমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের ২৯ আগস্টে নতুন দক্ষতা মূল্যায়ন পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা দিলে কর্মকর্তাদের একটি অংশ ২৭ আগস্ট আদালতে গিয়ে পরীক্ষা স্থগিত ও বাতিল চেয়ে রিট করেন। পরে আদালত বিষয়টি নিয়ে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন।
আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট করে যে, বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষা গ্রহণ এবং চাকরিতে কাউকে রাখা বা না-রাখার বিষয় ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত বিষয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, এটা নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিষয় নয়। তবে অতীতে কেন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ছাড়া কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং এখন কেনই বা কর্মী ছাঁটাই করার জন্য মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, এ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন উঠতে পারে।