
মাত্র ছয় মাস আগেও 'ডিপসিক' নামটি অনেকের কাছে ছিল অচেনা। কিন্তু এই স্টার্টআপ অল্প খরচে শক্তিশালী ওপেন সোর্স এআই মডেল তৈরি করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে, যা উন্নত দেশের মডেলগুলোর তুলনায় সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে এরই মধ্যে নিজের জায়গা করে নিয়েছে।
মরগান স্ট্যানলির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩ সালে চীনের এআই শিল্পের বাজারমূল্য ছিল ৩.২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়াবে ১৪০ বিলিয়ন ডলারে। আর এআই সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো ও উপাদান সরবরাহকারীদের অন্তর্ভুক্ত করলে এই পরিসর দাঁড়ায় ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলারে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গার্টনার জানিয়েছে, ২০২৩ সালের জুনে গ্রেটার চীনের মাত্র ৮ শতাংশ কোম্পানি জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করত। এক বছরেরও কম সময়ে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ শতাংশে।
যদিও প্রাথমিক উত্তেজনা কিছুটা কমেছে, 'ডিপসিক' এর মডেল এ খাতে দৃষ্টিভঙ্গির বড় পরিবর্তন এনেছে। অনেকেই এখনো অভিযোগ করেন, এআই মডেলগুলো মাঝে মাঝে 'ভুল' বা 'হ্যালুসিনেশন' করে। তবুও ডিপসিকের সাফল্য খরচ কমিয়েছে এবং চীন এখন প্রতিযোগিতা বা সর্বোচ্চ প্রযুক্তি উন্নয়নের বদলে বাস্তব ব্যবহারিক দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এআইকে গ্রহণ, অভিযোজন ও বিস্তারের মাধ্যমে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই প্রচেষ্টায় চীনা সরকারের প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এআই কোর্স চালু করতে হচ্ছে অভিভাবকদের চাপে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত ব্যবহার শুরু করাই সাফল্যের চাবিকাঠি—আর 'ডিপসিক'সহ অন্যান্য মডেলের উন্নয়ন এ পথকে আরও সহজ করেছে।
চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন এআই প্রযুক্তি নিয়ে নতুন উদ্যমে গবেষণায় মনোযোগী। যদিও এখনো অনেক উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। অ্যাকসেনচারের এক জরিপ বলছে, ৪৬ শতাংশ চীনা কোম্পানি বড় পরিসরে জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করছে, তবে মাত্র ৯ শতাংশ ইতিবাচক উৎপাদনশীলতা বা মুনাফার প্রভাব পেয়েছে।
এআই খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, সবকিছু এখনো শুরুর পর্যায়ে। ইয়িজি ইন্টেলিজেন্স-এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা জিয়াং শিংহুয়া জানান, ফার্মেসি, ফার্নিচার দোকান ও বিউটি ব্র্যান্ডের জন্য এআই-ভিত্তিক কাস্টমার সার্ভিস এজেন্ট ও লাইভস্ট্রিমার তৈরি করার পর ক্রেতারা আগ্রহ দেখিয়েছেন। এমনকি ছোটখাটো ভুল হলেও তা গ্রহণ করছেন তারা।
শুধু প্রযুক্তি উন্নয়ন নয়, চীন চাহিদা তৈরিতেও সক্রিয়। এপ্রিল মাসে চীনা নেতৃত্ব এআই-সংক্রান্ত স্টাডি সেশন আয়োজন করে, যেখানে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, চীনকে রাষ্ট্রনির্ভর সামষ্টিক সংগঠনের সুবিধা ('জুগুও তিজি ইয়োউশি') কাজে লাগাতে হবে।