 
						
									দ্রুতগতিতে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে বিশ্ব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence - AI) এখন আর কেবল গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ নেই। এটি বাস্তব জীবনে, কর্মক্ষেত্রে এবং অর্থনীতির প্রতিটি স্তরে প্রবেশ করে ফেলেছে। এর ফলে কর্মক্ষেত্র দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। বহু পেশায় মানুষকে প্রতিস্থাপন করছে এআই প্রযুক্তি, আবার কিছু পেশার গুরুত্ব বেড়েও চলেছে। এমন বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠেছে—ভবিষ্যতের চাকরির বাজারে এআই কোন কোন পেশা দখল করবে। এই ঝুঁকি থেকে একজন তরুণ বা পেশাজীবী কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন?
এআই যেসব চাকরি দখল করবে
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব কাজ পুনরাবৃত্তিমূলক, নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে সম্পন্ন করা যায় এবং মানবিক আবেগ বা জটিল চিন্তাশক্তি কম প্রয়োজন হয় সেসব কাজ এআই সহজেই করতে পারছে। নিচে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ পেশার তালিকা দেয়া হলো:
- ডেটা এন্ট্রি ও প্রসেসিং: এআই-চালিত সফটওয়্যার এখন খুব দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে ডেটা এন্ট্রি করতে পারে। ফলে এই ধরনের চাকরির চাহিদা দ্রুত কমছে।
- টেলিকলিং ও কাস্টমার সার্ভিস (বেসিক প্রশ্নোত্তরভিত্তিক): এআই চ্যাটবট ও ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টগুলো এখন গ্রাহক সেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাথমিক তথ্য দেওয়া বা অভিযোগ গ্রহণের কাজে মানুষকে আর প্রয়োজন হচ্ছে না।
- বেসিক অ্যাকাউন্টিং ও বুককিপিং: ক্লাউড বেইজড অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার এবং এআই টুলগুলো দ্রুত হিসাব মিলিয়ে ফেলতে পারে। যা এক সময় মানুষের উপর নির্ভরশীল ছিল।
- ট্রান্সলেশন ও টাইপিং: গুগল ট্রান্সলেট বা ডিপএল-এর মতো এআই টুল অনেক ভাষায় অনুবাদ এখন অনেকটাই নিখুঁতভাবে করতে পারে।
- পত্রিকা ও সংবাদ এডিটিং (বেসিক লেভেল): নির্ধারিত কাঠামোর ভিত্তিতে নিউজ রিপোর্ট তৈরি এখন এআই খুব সহজে করতে পারে। স্পোর্টস স্কোর বা স্টক মার্কেট আপডেট টাইপের নিউজ অনেক ক্ষেত্রে এখন AI-ই করছে।
যেসব পেশা নিরাপদ এবং সামনে চাহিদা আরো বাড়বে
এআই’র কারনে সব পেশা যে ঝুঁকিতে, তা নয়। কিছু কিছু পেশা রয়েছে যেগুলোতে মানবিক দক্ষতা, সমস্যা সমাধান, সৃজনশীলতা বা মানসিক বিচক্ষণতা প্রয়োজন—যা এখনো AI আয়ত্ত করতে পারেনি। যেমন:
- চিকিৎসা ও নার্সিং: রোগীর শারীরিক ভাষা বোঝা, সহানুভূতির সাথে চিকিৎসা দেওয়া—এসব এখনো মানুষের কাছেই রয়েছে।
- মনোবিজ্ঞানী ও কাউন্সেলর: মানুষের আবেগ-অনুভূতির জটিলতা বোঝা এবং মানসিক সহায়তা দেওয়া AI এখনো শিখতে পারেনি।
- ক্রিয়েটিভ পেশা (লেখক, শিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতা): মৌলিক চিন্তা, গল্প বলার ধরন ও আবেগঘন উপস্থাপন—এই জায়গাগুলোতে এখনো মানুষের সৃষ্টি অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
- AI ও প্রযুক্তি: মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার, ডেটা সায়েন্টিস্ট, সাইবার সিকিউরিটি এই কাজগুলোতে ভবিষ্যতে সর্বাধিক চাহিদা তৈরি হবে।
- উদ্যোক্তা ও স্ট্র্যাটেজিক লিডারশিপ: ব্যবসা কিভাবে পরিচালিত হবে, কোন পথে অগ্রসর হবে—এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজ এখনো কেবল মানুষের হাতে।
কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন?
ভবিষ্যতের চাকরি বাজারে টিকে থাকতে হলে কেবল ডিগ্রি বা সার্টিফিকেট নয়, চাই নির্দিষ্ট কিছু স্কিল:
- ডিজিটাল স্কিল: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোডিং, ডেটা অ্যানালাইসিস, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং অটোমেশন টুল ব্যবহারের দক্ষতা।
- ক্রিটিক্যাল থিংকিং ও সমস্যা সমাধান: জটিল পরিস্থিতিতে যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত নিতে পারা—এই দক্ষতা ভবিষ্যতে অত্যন্ত মূল্যবান হবে।
- কমিউনিকেশন ও ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স: দলগতভাবে কাজ করতে পারা এবং সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতেও দক্ষতা প্রয়োজন।
- আজীবন শেখার মানসিকতা: প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই নিজেকে সময়ের সঙ্গে আপডেট রাখতে নিয়মিত কোর্স বা প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
- সৃজনশীলতা ও উদ্যোক্তাপনা: নিজের আইডিয়া থেকে ব্যবসা বা প্রজেক্ট দাঁড় করানো ক্ষমতা আপনার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি যেমন চাকরির বাজারে পরিবর্তন আনছে, তেমনি তৈরি করছে নতুন সম্ভাবনার দ্বার। এই প্রযুক্তিকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই বরং এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মধ্যেই রয়েছে টিকে থাকার পথ। তাই এখনই সময় নিজের দক্ষতা মূল্যায়ন করা, প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা এবং ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার।

 
	                                     
	                                     
	                                     
	                                     
	                                     
	                                     
	                                    