ঢাকা     ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Biz Tech 24 :: বিজ টেক ২৪

অনলাইনে জুয়া: কঠোর নজরদারিতে বিকাশ গ্রাহকরা

বিজটেক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৩:৩০, ২৪ অক্টোবর ২০২২

আপডেট: ১৩:৩১, ২৪ অক্টোবর ২০২২

অনলাইনে জুয়া: কঠোর নজরদারিতে বিকাশ গ্রাহকরা

জুয়া খেলতে এখন আর মাঠ-ঘাটে যাওয়া লাগে না, শুধুমাত্র একটি অ্যাপ ডাউনলোড করেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই জুয়া খেলা যাচ্ছে। ঘরে বসে এসব অনলাইন জুয়ার আসরে নগদ টাকা দেয়া লাগেনা, সব লেনদেন হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। আর এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান বিকাশ।

শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক বেটিং সাইটগুলোতেও বাংলাদেশি জুয়াড়িদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। শুধু দেশি মুদ্রায় নয় অনেকে অনলাইনে বাজি ধরছেন ডলারেও। এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ক্রেডিট কার্ড। ফলে জুয়ার অর্থ সরাসরি চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফএস) প্রায় পাঁচ হাজার অবৈধ এজেন্ট রয়েছে। এসব এজেন্টের মাধ্যমে গত এক বছরে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এজেন্টরা হুন্ডির মাধ্যমে এই টাকা পাচার করেছে। বিদেশে অর্থপাচার ও অনলাইনে জুয়া খেলা নিয়ন্ত্রণে আনতে এবার মোবাইল ব্যাংকিং কঠোর নজরদারিতে আনতে যাচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এনিয়ে বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সম্প্রতি মাল্টার একটি অনলাইন গেমিং প্রতিষ্ঠানে ২০ জন বাংলাদেশির এমএফএসের (মোবাইল ব্যাংকিং) নিবন্ধিত হিসাব খুঁজে পায়। এসব হিসাবে এক বছরে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা জমা হয় এবং প্রায় ২২ কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছে।

এছাড়া রাশিয়া থেকে পরিচালিত আরেকটি জুয়ার সাইট মোস্টবেট-এর সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি কয়েকজনের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের লেনদেন পর্যালোচনা করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। চলতি বছরের ছয় মাসের লেনদেনে দেখা যায়, প্রতিটি এমএফএস অ্যাকাউন্টে মাসে গড়ে ৫০ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী নমুনায় থাকা ৫টি নম্বরে ৬ মাসে নেয়া হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। অনলাইন জুয়ার বেশিরভাগ লেনদেন হচ্ছে এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এভাবে অর্থ পাচার ঠেকানোসহ অনলাইন জুয়া নিয়ন্ত্রণে নড়েচড়ে বসেছে সরকার। অবৈধ এসব লেনদেন বন্ধ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও  বিএফআইইউকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বিকাশ, রকেট, নগদের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।

এরইমধ্যে অনলাইন জুয়া খেলার ৩৩১টি সাইট বন্ধ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি)। দীর্ঘদিন ধরে এসব সাইটের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়ে আসছিল। গত ১০ অক্টোবর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় বিটিআরসি।

বিটিআরসি’র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা সেলের নিয়মিত নজরদারির অংশ হিসেবে এসব জুয়া খেলার সাইটগুলো বন্ধ করা হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনলাইন জুয়া বা বাজি সংক্রান্ত ১৫০টি গুগল অ্যাপস বন্ধের জন্য রিপোর্ট করা হলে ইতোমধ্যে গুগল কর্তৃপক্ষ ১৪টি অ্যাপস বন্ধ করেছে। অবশিষ্ট অ্যাপস বন্ধ করার জন্য যাচাই-বাছাইসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি।

বিটিআরসি জানায়, ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে জুয়া খেলার ওয়েবসাইট, ফেসবুক লিংক এবং ইউটিউব লিংক বন্ধের জন্য রিপোর্ট করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ১৭টি ফেসবুক লিংক ও ১৭টি ইউটিউব লিংক বন্ধ করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট লিংকসমূহ বন্ধের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, মোবাইল অ্যাপ ছাড়াও অপরাধীরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি অনলাইন জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে এবং এজন্য দেশে এবং বিদেশে হোস্টিং করা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রথমে অ্যাকাউন্ট খুলে নিবন্ধন করা হয়। তারপর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য কার্ড বা অন্য কোনো মাধ্যমে জমা দিয়ে জুয়ায় অংশ নিতে হয়। অনলাইন জুয়াড়িরা বিকাশসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা আদান-প্রদান করে।

এ বিষয়ে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, বিকাশ বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নির্দেশনা শতভাগ মেনে চলে। আমাদের সব এজেন্ট, কর্মকর্তাসহ সংশ্নিষ্টদের বাধ্যতামূলকভাবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতি মাসেই কোনো না কোনো জেলায় আমাদের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলমান আছে। যদি কোনো এজেন্ট বা গ্রাহকের হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেন হয় বিকা‌শ স্বপ্রণোদিত হ‌য়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য দেয়। তারা এসব তথ্য যাচাই-বাছাই ক‌রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নি‌তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জানায়। ই‌তোপূ‌র্বে এমন সন্দেহজনক হিসাবের ত‌থ্যের ভিত্তি‌তে বেশ কিছু ব্যক্তি ও প্র‌তিষ্ঠা‌নের বিরু‌দ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। অপব্যবহার রোধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি অনুসরণ করে বিকাশ।