ঢাকা     ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

Biz Tech 24 :: বিজ টেক ২৪

ডিজিটাল হুন্ডির নিরাপদ মাধ্যম বিকাশ

প্রকাশিত: ২১:১০, ১৩ অক্টোবর ২০২২

আপডেট: ২১:১৯, ১৩ অক্টোবর ২০২২

ডিজিটাল হুন্ডির নিরাপদ মাধ্যম বিকাশ

রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা সুমাইয়া ইসলাম লিপির বড় ভাই মো. রনি ১৪ বছর ধরে সৌদি আরবে থাকেন। বোন লিপির বিকাশ নম্বরে চলতি বছরের মে থেকে জুলাই তিন মাসে মোট ২৪ বার লেনদেদের মাধ্যমে এক লাখ ৬১ হাজার ১২০ টাকা পাঠিয়েছেন রনি। আর এই পুরো টাকাই তিনি পাঠিয়েছেন ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে।

রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা সোনিয়া বেগমের স্বামী ১০ বছর ধরে সৌদি আরবে কাজ করেন। সেখান থেকে চলতি বছরের মে-জুলাই তিন মাসে সোনিয়ার ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরে মোট দুই লাখ ২২ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। শুধু লিপির ভাই বা সোনিয়ার স্বামী নন, এভাবেই লাখ লাখ প্রবাসী ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে দেশে স্বজনদের কাছে টাকা পাঠাচ্ছেন। আর এর নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিকাশ একাউন্ট। ফলে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা (রেমিট্যান্স)।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অবৈধ হুন্ডি কারবারে মোবাইল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হচ্ছে। মূলত তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজটি করে চক্রগুলো। প্রথম গ্রুপ প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে। এরপর দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায়, তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপ পাচারকারী বা তার সহযোগীর কাছ থেকে দেশীয় মুদ্রায় ওই অর্থ সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টকে দেয়।

আর সবশেষ গ্রুপ মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের মাধ্যমে প্রবাসীর কাছ থেকে পাওয়া নম্বরে সেই অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে। এই কাজ করে দেয়ার বিনিময়ে ওই সব এজেন্ট বড় অঙ্কের কমিশন পায়। যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রাথমিক পর্যায়ে মোবাইল ব্যাংকিং দেবা দেয়া বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায়-এর এজেন্টরা এই অবৈধ হুন্ডি কারবারে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে বিকাশ একাউন্ট।

সিআইডির হিসাবে শুধু হুন্ডির মাধ্যমে চলতি বছরের মে থেকে আগস্ট এই চার মাসে ২৫ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ। আর একই কারণে এক বছরে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা দেশেই আসেনি। সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের পাঁচ হাজারেরও বেশি এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এসব হিসাব থেকে অবৈধভাবে লেনদেন হচ্ছে। কয়েকটি চক্র অবৈধভাবে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা পাচার করছে। এজেন্টদের সহযোগিতায় অর্থ পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ গড়াসহ অনলাইন জুয়া, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালানসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছে।

ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্তের বরাত দিয়ে সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসীদের টাকা ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসার তথ্য উঠে এসেছে। আর এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যম। নিরাপদ এ মাধ্যমের বেশির ভাগই বিকাশ নম্বর বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, বিকাশ বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নির্দেশনা শতভাগ মেনে চলে। আমাদের সব এজেন্ট, কর্মকর্তাসহ সংশ্নিষ্টদের বাধ্যতামূলকভাবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতি মাসেই কোনো না কোনো জেলায় আমাদের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলমান আছে। যদি কোনো এজেন্ট বা গ্রাহকের হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেন হয় বিকা‌শ স্বপ্রণোদিত হ‌য়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য দেয়। তারা এসব তথ্য যাচাই-বাছাই ক‌রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নি‌তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জানায়। ই‌তোপূ‌র্বে এমন সন্দেহজনক হিসাবের ত‌থ্যের ভিত্তি‌তে বেশ কিছু ব্যক্তি ও প্র‌তিষ্ঠা‌নের বিরু‌দ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অপব্যবহার রোধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি অনুসরণ করে বিকাশ।