
প্রযুক্তির এই যুগে অনেকের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে ইয়ারফোন। বাসে, রাস্তায়, অফিসে এমনকি ঘুমানোর সময়ও অনেকেই ইয়ারফোন কানে দিয়ে গান শোনেন বা ভিডিও দেখেন। কিন্তু এই অভ্যাস যে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি নষ্ট করছে, তা অনেকে বুঝতেই পারেন না। চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘ সময় উচ্চ শব্দে ইয়ারফোন ব্যবহার করলে কানে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রায় ১.১ বিলিয়ন তরুণ-তরুণী ঝুঁকিতে আছেন, কারণ তারা নিয়মিত উচ্চ শব্দে গান বা অডিও শোনেন। বিশেষ করে যারা প্রতিদিন ৮৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ইয়ারফোন ব্যবহার করেন, তাদের শ্রবণশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
নাক, কান ও গলার চিকিৎসকদের মতে, ইয়ারফোন দিয়ে দীর্ঘ সময় উচ্চ শব্দে গান শোনা কানের ভেতরের সূক্ষ্ম স্নায়ুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শুরুতে হয়তো হালকা শব্দে প্রতিক্রিয়া কম মনে হবে কিন্তু সময়ের সঙ্গে এটি স্থায়ী শ্রবণহানিতে রূপ নিতে পারে। অনেক তরুণই মোবাইল গেম বা ভিডিও কলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইয়ারফোন ব্যবহার করেন। এমনকি অনেকে রাস্তায় ট্রাফিকের শব্দের মধ্যে হেডফোনের শব্দ আরো বাড়িয়ে দেন, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ক্ষতি একবার হয়ে গেলে তা পুরোপুরি ঠিক হয় না। তবে সতর্ক থাকলে ঝুঁকি অনেক কমানো সম্ভব। প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ৫-১০ মিনিট ইয়ারফোন খুলে বিশ্রাম দেওয়া, শব্দের মাত্রা ৬০ শতাংশের নিচে রাখা এবং নয়েজ-ক্যানসেলিং হেডফোন ব্যবহার করা কানের জন্য ভালো অভ্যাস।
বাংলাদেশে এখন প্রায় ৪ কোটির বেশি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী রয়েছেন এবং তাদের বড় অংশই নিয়মিত ইয়ারফোন ব্যবহার করেন। ফলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখন থেকেই সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন।
চিকিৎসকদের ভাষায়, কানের যত্ন নেওয়া মানে শুধু পরিষ্কার রাখা নয়—শব্দদূষণ থেকে রক্ষা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আজ যে তরুণরা ইয়ারফোন ছাড়তে পারছেন না, তারাই আগামী দিনে শ্রবণযন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারেন। এখনই সচেতন না হলে ‘সাইলেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি’—অর্থাৎ শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা—ভবিষ্যতে এক নতুন জনস্বাস্থ্য সংকটে পরিণত হতে পারে।