ঢাকা     ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

Biz Tech 24 :: বিজ টেক ২৪

পুরাতন মোবাইল কেনার আগে জেনে নিন

বিজটেক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ৬ মার্চ ২০২১

আপডেট: ১৬:৩৫, ৬ মার্চ ২০২১

পুরাতন মোবাইল কেনার আগে জেনে নিন

এরকম অনেক সময় হয়ে থাকে যে একটি নতুন মোবাইল কেনার জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত টাকা থাকে না। আর মোবাইলের প্রতি থাকা আমাদের আকর্ষণটিকে সম্পূর্ণ করার জন্য আমরা একটি সেকেন্ড হ্যান্ড বা পুরাতন ফোন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।

এমনিতে, পুরোনো মোবাইল কিনার ক্ষেত্রে সমস্যা কিছুই নেই। তবে, যদি আপনি একটি সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনার আগে কিছু জরুরি বিষয়ে নজর না দিয়ে থাকেন, তাহলে অবশই, হতে পারে আপনি অধিক টাকা দিয়ে একটি খারাপ পুরাতন মোবাইল কিনে নিতে চলেছেন।

এছাড়া, সব থেকে জরুরি বিষয় যেটা সেটা হলো, ভালো করে যাচাই না করে পুরোনো মোবাইল কিনলে, অনেক ক্ষেত্রেই আপনি বিপদে পড়ার সম্ভাবনা অবশই রয়েছে। তাই, যদি আপনি একটি পুরনো মোবাইল কেনার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে তার আগে নিজের বিষয়গুলো অবশ্যই যাচাই করে নিন।

১. চুরির মোবাইল কি না
অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে পুরনো মোবাইল বিক্রি করার নামে চুরির মোবাইল বিক্রি করা হয়। এবং যদি সত্যি আপনার কাছে একটি চুরির মোবাইল বিক্রি করা হয়, তাহলে অবশই আপনি বিপদে পড়ার সম্ভাবনা প্রচুর।

সেকেন্ড হ্যান্ড পুরনো মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে আমরা সেই মোবাইলের ক্যাশ মেমো দেখার প্রয়োজন মনে করি না। আর এখানেই আমরা সব থেকে বড় ভুল করে থাকি। ক্যাশ মেমো না দেখার ফলে, আমাদের কেনা পুরোনো মোবাইলটি চুরির নাকি সেই মোবাইল বিক্রি করতে আশা ব্যক্তির, সেটার কোনো প্রমাণ থাকছে না। যার ফলে, ভবিষ্যতে যদি সেই মোবাইল চুরির হয়ে থাকে, তাহলে পুলিশ আপনাকে সেই মোবাইলের চোর হিসেবে ভেবে নেবে। তাই, সাধারণ একটি মোবাইলের জন্য আপনি সাংঘাতিক বড় বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন।

যেকোনো সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার সময় সেই মোবাইলের অরিজিনাল বিল (bill) এর হার্ড কপি বা সফট কপি দেখবেন এবং নিজের কাছে রাখবেন।
মোবাইলের IMEI number এর ওপরে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেই IMEI number মোবাইলের আসল ক্যাশ মেমোর মধ্যে লেখা রয়েছে, সেই IMEI নম্বর মোবাইলের মধ্যে থাকতে হবে। আপনি, *#06# টাইপ করে যেকোনো মোবাইলের IMEI নাম্বর চেক করতে পারবেন। তারপর, মোবাইলের IMEI নম্বর এর সাথে ক্যাশ মেমোতে থাকা IMEI নম্বর এর সাথে মিলিয়ে দেখুন।

মনে রাখবেন, মোবাইলটির IMEI number এবং মোবাইল কেনার সময় দেওয়া ক্যাশ মেমোর মধ্যে লেখা থাকা IMEI number এক থাকতে হবে। দুটি ক্ষেত্রে যদি IMEI নম্বর আলাদা আলাদা থাকে, তাহলে মোবাইলটি চুরির মোবাইল হওয়ার সম্ভাবনা ৯০%। এক্ষেত্রে, সেই পুরোনো মোবাইল ফোন ভুলেও কিনবেন না।

২. নকল মোবাইল নাকি সেটা দেখুন
বর্তমান সময়ে পুরাতন মোবাইল বিক্রির ব্যবসা প্রচুর পরিমাণে করা হচ্ছে। এমন কিছু ব্যক্তি বা সংগঠন রয়েছে যারা নাকি নকল মোবাইল বিক্রি করার কাজ করছেন। যে কোনো আসল মোবাইলের মতো দেখতে একই ধরনের নকল মোবাইল বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে।

আবার অনেক সময়, মোবাইলের বাইরের কাভার/কেস আসল কোম্পানির লাগিয়ে, ভেতরে নকল/ অন্য মোবাইলের অংশ লাগিয়ে রাখা হয়। এক্ষেত্রে, সেই নকল মোবাইল গুলোকে খালি চোখে দেখে আসল বা নকলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারাটা খুব কঠিন কাজ।

বর্তমান সময়ে সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনার ক্ষেত্রে, আমরা অনলাইন ইন্টারনেটের মাধ্যমে লোকেদের সাথে যোগাযোগ করে থাকি। এক্ষেত্রে, এক দেখাতেই যদি আপনি আসল মোবাইল চিনে নিতে না পারছেন, তাহলে, পরে বুঝতে পারলেও মোবাইল বিক্রি করা ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়াটা সম্ভব হবে না। তাই, পুরাতন মোবাইল কেনার সময় কিছু বিষয়ে ধ্যান রাখতে হবে।

মোবাইলের settings ইত্যাদিতে দিয়ে মোবাইলের original model name দেখুন। বিশেষ করে, মোবাইলের hardware configuration যেমন RAM, ROM, Processor ইত্যাদি চেক করুন।

ইন্টারনেটের সাহায্যে আপনি মোবাইলের মডেলটির hardware configuration গুলোকে মিলিয়ে দেখুন। মোবাইলের settings menu তে গিয়ে about phone এর ট্যাবে ক্লিক করুন। এতে, আপনারা সেই মোবাইলের model number, model name, CPU, RAM ইত্যাদি প্রত্যেক মূল তথ্য গুলো জেনে নিতে পারবেন।
*#06# নিজের মোবাইল থেকে dial করুন এবং এতে আপনাকে আপনার মোবাইলের IMEI নম্বর দেখিয়ে দেওয়া হবে। যেকোনো একটি IMEI number copy করুন এবং “imei.info” ওয়েবসাইটে গিয়ে IMEI box এর মধ্যে নিজের copy করা IMEI number লিখে check করুন। এতে, আপনি আপনার মোবাইলের অরিজিনাল model name এবং brand name জেনে নিতে পারবেন।

৩. মোবাইলের ব্যাটারি নিয়ে যাচাই করুন
অনেক সময় এরকম হয়ে থাকে যে, মোবাইলটি বাইরের থেকে দেখতে দারুণ অবস্থায় রয়েছে বলে মনে হবে। কিন্তু সমস্যা থাকবে মোবাইলের ব্যাটারি নিয়ে যেটা নিয়ে আমরা অধিক নজর দিয়ে থাকি না। মোবাইলের ব্যাটারিতে সমস্যা থাকলে সেটা অনেক সময় সাথে সাথে বুঝতে পারবেন না। তবে, প্রায় কিছু সময় ব্যবহার করার পর ব্যাটারির সমস্যা আপনার নজরে পড়ে থাকে।

তাই, পুরোনো মোবাইল কেনার সময় কিছু সময় নিয়ে সেই মোবাইল ব্যবহার করে দেখুন, গেম খেলুন, গান শুনুন বা ভিডিও দেখুন। মুখের কোথায় বিশ্বাস না করে অবশই যাচাই করে দেখুন। যদি ব্যাটারি নিয়ে মোবাইলে সমস্যা থাকে, তাহলে সেটা আপনার চোখে অবশই পড়বে।

৪. মোবাইলের পোর্ট গুলো কাজ করছে তো?
ব্যবহৃত মোবাইল ফোন কেনার সময় আপনাকে মোবাইলের বিভিন্ন ports এবং accessories গুলোর ওপরে নজর দিতে হবে। মোবাইলের headphone / headphone port, charger/charging port ইত্যাদি কাজ করছে কি না সেটা দেখুন।

নতুন মোবাইলের ক্ষেত্রে সেগুলো অবশই ভালোই থাকবে। তবে, সমস্যা হলেও ওয়ারেন্টি অবশই রয়েছে। কিন্তু পুরনো মোবাইলের ক্ষেত্রে কিন্তু সে সুযোগ পাচ্ছেন না। তাহলে আপনাকে আবার সেগুলোকে ভালো করার ক্ষেত্রে টাকা খরচ করতে হবে।

অনেক সময় পুরনো মোবাইলের SIM card tray এবং memory card tray খারাপ থাকে। তাই, মোবাইল কেনার আগে সেই সব বিষয়ে যাচাই অবশই করতে হবে।

৫. বেশি টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই
মনে রাখবেন, ব্যবহৃত মোবাইলের ক্ষেত্রে আপনার থেকে বেশি টাকা আদায় করার চেষ্টা করা হবে। তবে, আপনি যতটা সম্ভব কম টাকা দিয়ে সেই পুরোনো মোবাইল কেনার চেষ্টা করতে হবে।

আপনি একটি নতুন মোবাইল কিনতে পারছেন না বলেই পুরোনো ফোন কিনতে চলেছেন। তাই, বেশি টাকা দিয়ে যদি পুরনো ফোন কিনতে  চলেছেন, তাহলে আপনার লাভ কী হলো!

মনে রাখবেন, যেই সময় একটি মোবাইলের মডেল প্রথম বাজারে আসে, তখন সেই মোবাইলের মডেলের দাম অধিক বেশি থাকে। কিন্তু, কিছু দিন বা মাস যাওয়ার পর সেই মডেলের দাম কমতে থাকে। তাই সম্ভাবনা রয়েছে যে, যেই ব্যক্তি আপনাকে মোবাইল বিক্রি করবেন সে আপনাকে মোবাইলের শুরুর দামের ওপর নির্ভর করে দাম বলবে। সেক্ষেত্রে, আপনি মোবাইল এর বর্তমান বাজারমূল্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাচাই করে দেখুন। বর্তমানে নতুন কিনতে গেলে সেই মোবাইলের দাম কতো, সেটার ওপরে নজর দিয়ে দাম নির্ধারিত করুন।

সেক্ষেত্রে পরামর্শ, মোবাইলটি নতুন কিনতে গেলে, বর্তমান বাজারমূল্য যতো হবে তার ৩৫% থেকে ৪৫% দিয়ে আপনি সেই পুরোনো মোবাইল কিনুন। আপনি কত শতাংশ টাকা দিবেন সেটা নির্ভর করছে মোবাইলটি কতটা পুরোনো সেটার ওপরে।

৬. মোবাইলের মধ্যে ড্যামেজ রয়েছে নাকি ?
মোবাইলটি চুরির মোবাইল না এবং মোবাইলের ব্যাটারি, পোর্ট ইত্যাদি যদি সব ঠিক থাকে, তাহলে পরের ধাপে, আপনাদের দেখে নিতে হবে মোবাইলের ফিজিক্যাল কন্ডিশন (physical condition)।

অনেক সময়, মোবাইল কেনার খুশিতে আমরা সেই মোবাইলের physical parts/body ভালো করে দেখি না। ফলে, ঘরে গিয়ে নতুন নতুন বিষয় আমাদের চোখে পড়ে। তাই, মোবাইল কেনার সময় প্রত্যেকটি অংশ এবং সম্পূর্ণ বডি ভালো করে দেখে নিতে হবে।

মনে রাখবেন, এটা একটি সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল ফোন আর যেই ব্যক্তি মোবাইলটি আগে ব্যবহার করেছে, তার হাত থেকে মোবাইলটি পড়তেও পারে বা কোনো রকমের স্ক্র্যাচ সেখানে থাকতে পারে।

যদি মোবাইলের মধ্যে cover লাগানো আছে, তাহলে সেই কভার খুলুন এবং মোবাইলের আগে ও পিছে ভালো করে দেখুন।

৭. মোবাইলের সেলুলার নেটওয়ার্ক
অনেক সময় মোবাইলের মধ্যে সব সঠিক থাকলেও cellular network connection নিয়ে সমস্যা পাওয়া যায়। মোবাইলটি বাইরের থেকে অবশই ভালো থাকবে, তবে, ঘরে গিয়ে যখন আপনি SIM insert করবেন, তখন যদি সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক এর কাঠি চলে না আসে বা একেবারেই নেটওয়ার্ক না আসে, তাহলে মনে করবেন মোবাইলের সেলুলার নেটওয়ার্ক হার্ডওয়্যার এর সাথে সমস্যা রয়েছে। এবং অনেকেই এসব সমস্যা থাকার ফলে অনেক কম দামে মোবাইল বিক্রি করেন।

ফলে মোবাইলটি কেনার সময় ক্রেতা ভেবে থাকেন যে, আমি অনেক কমে মোবাইলটি পেয়ে যাচ্ছি, তাই এসব বিষয়ে যাচাই না করেই সেই মোবাইল কিনে ফেলেন। তাই, মোবাইল কিনতে যাওয়ার সময় SIM card লাগিয়ে মোবাইল এর network connection অবশই চেক করবেন।

অন্যান্য জরুরি বিষয় গুলো দেখুন

ওপরের পয়েন্টগুলো ছাড়াও আরো কিছু সাধারণ বিষয় রয়েছে যেগুলোর ওপরে আপনার নজর দিতে হবে। যেহেতু মোবাইলটি পুরোনো তাই ডিসপ্লের (display) ওপরে ভালো করে নজর দিন। ইন্টারনাল মেমোরি (internal memory) কতটুকু খালি রয়েছে সেটা দেখুন।  যদি মোবাইলের ইন্টারনাল মেমোরি একেবারেই ভর্তি (full) তাহলে অবশই মোবাইলে নতুন কিছু install করতে পারবেন না।

মোবাইলের ক্যামেরা গুলো চেক করে দেখুন। প্রত্যেকটি ক্যামেরা (front/selfie) ভালো করে কাজ করছে কি না এবং ক্যামেরা কোয়ালিটি ভালো কি না সেগুলো দেখুন। ফোন চার্জ হতে কত সময় নিচ্ছে সেটাও কিন্তু অবশই দেখে নেবেন।