ঢাকা     ০৮ জুলাই ২০২৫ ||  ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

Biz Tech 24 :: বিজ টেক ২৪

বাংলাদেশী পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫% শুল্ক আরোপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:০৫, ৮ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশী পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫% শুল্ক আরোপ

১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫% শুল্ক বাংলাদেশের রপ্তানি অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের কারনে আমেরিকান বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশাধিকারকে আরো প্রভাবিত করবে।

সোমবার মার্কিন সরকার ১৪টি দেশকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়ে আসন্ন শুল্ক সমন্বয়ের বিস্তারিত জানিয়েছে। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের আগ্রাসী বাণিজ্য অবস্থানের ধারাবাহিকতা আরও স্পষ্ট হলো, যা এ বছরের শুরুতে মিত্র দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক হার বৃদ্ধির ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু করেছিল।

প্রাথমিকভাবে, গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন ১০০টিরও বেশি দেশের ওপর উল্লেখযোগ্য শুল্ক আরোপ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব বাজারগুলোতে তীব্র অস্থিরতা দেখা যায়। এর সপ্তাহখানেক পর এই শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল, যদিও চীনা আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল।

বাংলাদেশের জন্য ৩৫% শুল্ক পুনর্বহাল ও নির্দিষ্ট করার বর্তমান সিদ্ধান্তটি এমন এক সময়ে এলো, যখন বিভিন্ন দেশ শুল্কের প্রভাব কমাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে। 

মার্কিন গণমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই শুল্ক নোটিশ প্রাপ্ত তালিকায় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো প্রধান অর্থনৈতিক দেশগুলোর পাশাপাশি সার্বিয়া, থাইল্যান্ড, তিউনিসিয়া, মালয়েশিয়া, কাজাখস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, বসনিয়া ও ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস এবং মিয়ানমারের মতো ছোট রপ্তানিকারক দেশগুলোও অন্তর্ভুক্ত। 

ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প সরাসরি জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে উদ্দেশ্য করে একটি কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যদি কোনো কারণে আপনারা আপনাদের শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে, আপনারা যে পরিমাণ বৃদ্ধি করতে চান তা আমরা যে ২৫% চার্জ করি তার সাথে যোগ করা হবে।’ এই বিবৃতিটি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি প্রতিশোধমূলক পদ্ধতি তুলে ধরে, যা ইঙ্গিত দেয় যে এই দেশগুলো থেকে যেকোনো প্রতিশোধমূলক শুল্কের জন্য আরও বর্ধিত মার্কিন শুল্ক দিতে হবে।

১ আগস্টের এই নতুন শুল্ক আরোপের সময়সীমা শুরু হলেও রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প কিছুটা নমনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। 

বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়

অর্থনৈতিক প্রভাব: ৩৫% শুল্ক আরোপের ফলে আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য বাংলাদেশি পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে চাহিদা হ্রাস পেতে পারে। এটি বাংলাদেশের রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতিতে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক (RMG) শিল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বাজারের বৈচিত্র্যকরণ: এই পরিস্থিতি বাংলাদেশকে তার রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্যকরণের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে বাধ্য করতে পারে, যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমবে।

বাণিজ্য আলোচনা: শুল্ক আরোপের পেছনের সুনির্দিষ্ট কারণগুলো বুঝতে এবং এর প্রভাব প্রশমন বা ছাড়ের সম্ভাব্য উপায়গুলো অনুসন্ধান করার জন্য বাংলাদেশের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জরুরি দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশ নেয়া প্রয়োজন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী আরও সুরক্ষাবাদী বাণিজ্য নীতির দিকে চলমান পরিবর্তনকে আরও স্পষ্ট করে তোলে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।