
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্যতম বৃহৎ আয়োজন ‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৫ শেষ হয়েছে। রাজধানীর সেনাপ্রাঙ্গণে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো)-এর আয়োজনে এবং ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিল-এর সহযোগিতায় ষষ্ঠবারের মতো এবারের সামিট অনুষ্ঠিত হয়।
“BPO 2.0: Revolution to Innovation” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের সামিটে বিপিও খাতের রূপান্তরের পাশাপাশি উদ্ভাবনের গতিপথকে তুলে ধরা হয়। দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে ৩০টিরও অধিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইটিইএস/বিপিও প্রতিষ্ঠান তাদের সেবা ও পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ পায়। বিপিও খাতের সামগ্রিক অগ্রগতি, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজন করা হয় নয়টি থিমভিত্তিক সেমিনার ও কর্মশালা, যেখানে ৮৬ জন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞগণ, কর্পোরেট নেতৃবৃন্দ ও সরকারের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিগণ বক্তা হিসেবে অংশ নেন। সাইবার নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান, দক্ষতা উন্নয়ন ও আইটি পলিসি সংক্রান্ত নানা বিষয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনায় উঠে আসে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা।
এবারের সামিটে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল একাধিক Expo Zone এবং Experience Zone যেখানে দর্শনার্থীরা সরাসরি অভিজ্ঞতা নিতে পেরেছেন প্রযুক্তির ভবিষ্যতের সঙ্গে। উল্লেখযোগ্য এক্সপেরিয়েন্স জোনগুলোতে ছিল স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা, জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে নির্মিত AR (Augmented Reality) ও VR (Virtual Reality) অভিজ্ঞতা, উন্নতমানের ড্রোন ও সাবমেরিন টেকনোলজি, এবং রোবট প্রদর্শনী।
তরুণদের জন্য ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ও চাকরি মেলা ছিল সামিটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন। বিপিও খাতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় বিশেষ কর্মশালা, যেখানে তাদের সামনে তুলে ধরা হয় আউটসোর্সিং শিল্পের সম্ভাবনা ও পেশাগত বিকাশের বাস্তব চিত্র। চাকরি মেলার মাধ্যমে শতাধিক তরুণ তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেয় যেখান থেকে ১০০ এর অধিক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।
ফ্রিল্যান্সারদের সমস্যা, সফলতা ও ভবিষ্যৎ নিয়েও আয়োজন করা হয় পৃথক সেমিনার, যেখানে তাদের অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এই খাতকে আরও সুসংগঠিত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সামিটে ফ্রিল্যান্সার ফোরামের ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা তুলে ধরেন বক্তারা।
নীতিমালা সংশোধন ও খাতভিত্তিক নীতিনির্ধারণ নিয়েও হয় বিশেষ পলিসি সংলাপ, যেখানে উপস্থিত ছিলেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিগণ, আইসিটি খাতের নীতিনির্ধারক, প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও গবেষকরা। এ সেশনে আউটসোর্সিং শিল্পের বিকাশে প্রয়োজনীয় নীতিগত সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
সামিটে কর্মক্ষেত্রে নারী বিষয়ক সেমিনারে নারীর নেতৃত্ব, নিরাপদ পরিবেশ এবং সমান সুযোগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বক্তারা নারীর দক্ষতাকে বিপিও খাতের বিকাশে অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন।
সামিটে আরো আয়োজন করা হয় ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) ও আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ের ভূমিকা, এবং বৈশ্বিক অংশীদারত্ব ও আউটসোর্সিংয়ের ভবিষ্যৎ বিষয়ক গুরুত্ববাহী সেমিনারসমূহ যাতে অংশ নেন দেশি-বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞগণ, যারা আউটসোর্সিং খাতে অর্থপ্রবাহ সহজীকরণ, বৈশ্বিক বিনিয়োগ, অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণ এবং টেকসই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জনে করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান। এছাড়া আইসিটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সাঈদ, বাক্কো সভাপতি তানভীর ইব্রাহীম, এবং সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আলিম।
উল্লেখ্য, এবারের সামিটে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপে ছিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (bijf) ও টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ (TMGB)।